অভিযোগের পাহাড় মহানগর ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি নিয়ে

অভিযোগের পাহাড় মহানগর ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি নিয়ে

ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ-পদবী বন্টনে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ও মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।

২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির পর চলতি বছরের জুলাই ঢাকার চার মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব হিসেবে দুই সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১১ আগস্ট আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। কমিটি নিয়ে অভিযোগের পাহাড় নেতাকর্মীদের।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২০নং যুগ্ম আহব্বায়ক রুবেল হোসেন পূর্ণাঙ্গ হওয়া ঢাকা মহানগর পূর্ব (এনাম-মানিক) কমিটিতে ১৫৪ নং ক্রমিকের সহসাধারণ সম্পাদক হিসেবে মূল্যায়িত হয়েছিলেন। রুবেল হোসেন এখন পূর্ব থেকে দক্ষিণের নেতা বনে গেছেন। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী এবং মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের আহবায়ক পাভেল শিকদারের লোক হিসেবে রুবেল হোসেন পরিচিত।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আসমা আক্তার নিপা নবগঠিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে মূল্যায়িত হয়েছেন। যা বর্তমান কেন্দ্রঘোষিত নিয়মের পরিপন্থী। সাত্তার পাটোয়ারি, পাভেল শিকদার, রুবেল হোসেন ও আসমা আক্তার নিপা চাঁদপুর জেলার সন্তান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের কমিটিতে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদকে নিয়ে বিতর্কের অভিযোগ নেতাকর্মীদের। রাজু আহমেদ (জাকির-গাফফার) কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে থাকলেও নগর রাজনীতিতে পরিচিত মুখ নন। ২ লাখ টাকার বিনিময়ে রাজু আহমেদকে তাজ মাহমুদের বিকল্প হিসেবে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠায় পাভেল শিকদার ও নিয়াজ মাহমুদ নিলয়। রাজু আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিজ্ঞানের ছাত্র এবং বর্তমান সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনও একই বিভাগের ছাত্র ছিলেন। রাজু আহমেদ বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ জুয়েলের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই হিসেবে রাজু আহমেদের পক্ষে ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। কিন্তু বাস্তবতায় রাজু আহমেদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের পরিচিত মুখ নন।

ঘোষিত কমিটিতে এক নেতা এক পদ নীতি মানা হয়নি অর্থাৎ মহানগর কমিটিতে ও তার অধীনস্থ ওয়ার্ড কমিটিতে একই সাথে থাকা যাবে না । কিন্তু ঢাকা মহানগর পূর্ব কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক নাফিউর রহমান পাভেল ধানমন্ডির ১৫ নং ওয়ার্ড কমিটির ২ নং সদস্য অর্থাৎ এটা নিয়ম পরিপন্থী। পরবর্তী সময়ে নাফিউর রহমান পাভেলকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন নিজের প্রভাব খাটিয়ে পাভেলকে পদ দিয়েছিলেন।

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক মাইনুল ইসলাম মানিককে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। বাংলা কলেজ ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আকরাম আহমেদ ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক, কবি নজরুল কলেজের ছাত্রদলের নেতা শেখ ফরিদকে দক্ষিণে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। তারা সবাই সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের অনুসারী হিসেবে স্বীকৃত।

অনিয়ম সম্পর্কে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়ে নেতাকর্মীরা নেতৃত্বে এসেছে এবং মহানগর রাজনীতিতে ত্যাগী ও মেধাবী ছেলেদেরকে আমরা উৎসাহিত করি। আর তাই ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদেরকে মূল নেতৃত্বের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। কলেজ থেকে যারা মহানগরের সংযুক্ত হয়েছে প্রত্যেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে একাধিকবার জেলে গিয়েছেন এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে।

এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিতর্ক আছে যেখানে রাজিব হোসেন তারেক রহমানের গুডবুকে থাকার পরও মূল্যায়িত হয়নি। ঢাকা মহানগর পূর্ব কমিটি নিয়ে ঢাকার এক প্রভাবশালী নেতার সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দের। ভাগ্নের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামার সাথে দূরত্ব তৈরি করেন ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন। সর্বোপরি মহানগর কমিটি গঠন হওয়ার পর ঢাকা মহানগর ছাত্রদলে নেতা-কর্মীদের ভেতর ক্ষোভ বিরাজ করছে।

আপনি আরও পড়তে পারেন